কুরআন-হাদিস গবেষণা করে দেখা গেছে,রমজান মাসের আমলগুলো সঠিকভাবে আদায় আদায় করার জন্য শাবান মাসে ৪টি আমল বেশি বেশি করা খুবই জরুরি। শাবান মাসে এ আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করতে পারলেই রমজানের ইবাদতগুলো করা সহজ হবে। পরিপূর্ণ ফজিলত ও বরকত লাভ সম্ভব হবে। তাহলো-
> বেশি বেশি রোজা রাখা।
কেন রোজা রাখবেন? কারণ এ মাসেই বান্দার বাৎসরিক আমাল আল্লাহ নিকট উপস্থাপন করবেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘শাবান মাসে বেশি রোজা রাখার কারণ হলো- এ মাসে আল্লাহর কাছে মানুষের আমলনামাগুলো উপস্থাপন করা হয়। আর আমি চাই রোজা থাকা অবস্থায় আমার আমলনামা আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা হোক।
শাবান মাসে বেশি রোজা রাখার বড় কারণ হলো, এটা নবিজী ও সাহাবায়ে কেরাম বেশি বেশি রোজা রাখতেন।
হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শাবান মাসে আপনাকে যত রোজা রাখতে দেখি, অন্য মাসে এতো পরিমাণ রোজা রাখতে দেখিনি। অর্থাৎ আপনি কেন এ মাসে এতবেশি রোজা রাখেন?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বললেন, এটি এমন একটি মাস। যা রজব এবং রমজানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দুইটি মাসের মধ্যে পড়ে। আর অধিকাংশ মানুষ এ মাসটি সম্পর্কে গাফেল থাকে। অর্থাৎ এ মাসটি সম্পর্কে তারা বেখবর থাকে, উদাসিন থাকে। যার ফলে তারা ভালো আমল করে না। তারা ভাবে যে, রমজান তো আছেই।’ (নাসাঈ)
স্বরণ রাখা উচিত,মানুষ যে সময়টিতে আল্লাহকে স্মরণ করে না, সে সময়টিতে আল্লাহকে স্মরণ করায় রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা পালন করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতেন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ আমলটি উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য অন্যতম শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা।
তাছাড়া রোজা একটি অসাধারণ ইবাদত। কেননা রোজা রাখা অবস্থায় কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতে যাবে। হজরত হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, কেউ যদি রোজা রাখা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তবে সে জান্নাতে যাবেন।
> বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা।
সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন এবং প্রসিদ্ধ ইমামগণ শাবান মাস আসলেই বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করতেন। কুরআন নাজিলের মাসের বরকত লাভে এ মাসে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করায়ও রয়েছে ফজিলত ও মর্যাদা।
> বেশি বেশি সাদাকাহ (দান-সহযোগিতা) করা।
অনুরূপভাবে সালফে সালেহিনগণ এ মাসজুড়ে বেশি বেশি দান-সাদকাহ করে রমজানের দান-সাদকার অভ্যাস নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলতেন। যাতে রমজান জুড়ে দান-সাদকায় অতিবাহিত করা যায়। আবার গরিব অসহায়দের রমজানের কষ্ট দূর করা যায়।
> বেশি বেশি ইসতেগফার করা।
রমজানে রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাতের জন্য শাবান মাস থেকেই সালফে সালেহিনগণ বেশি বেশি ইসতেগফার করতেন। যা মানুষকে রমজানজুড়ে আমলে উদ্যোগী করে তোলে।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, শাবান মাস জুড়ে নিজেদের ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত রাখা। রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাবান মাসজুড়ে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
0 Comments