সর্বশেষ

3/recent/ticker-posts

Click for Earn

শবে বরাতে আমাদের করণীয় ও বর্জণীয়ঃ মাওলানা ইকবাল হুসাইন ইলামপাড়ী

 হিজরী বৎসরের অষ্টম মাসের ১৪ তারিখ অতিবাহিত হয়ে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সাথে সাথেই শবে বরাতের রাত শুরু হয়,যার শেষ হয় ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।আর ফজর থেকে নিয়ে  সূর্য অস্তমিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শবে বরাতের দিন হিসেবে পরিগণিত।

সে হিসেবে ১৪৪২ হিজরী মোতাবেক ২০২১ সালের শবে বরাত হচ্ছে আগামী ২৯শে মার্চ সোমবার ‍দিবাগত রাত



শবে বরাতের বিশ্লেষণঃ

শবে বরাত একটি ফর্সি শব্দ,তাই এই শব্দের ব্যবহার আরবীতে নেই।আরবী ভাষাভাষীগণ বলেন নিসফ্ শা'বান।

ইরান ও আফগানিস্তান নিম শা'বান।মালয় ভাষাভাষীগণ বলেন নিসফু শা'বান; ইত্যাদি।

স্রেফ আমাদের এসিয়া উপমহাদে শবে বরাত বা মধ্য-শা'বান (আরবি: نصف شعبان) “শব অর্থ রাত আর বরাত অর্থ বন্টন সুতরাং শবে বরাতের অর্থ হলো বন্টনের রাত।কেননা এ রাতে বান্দার রিজিক বন্টন করা হয়।

বরাত এর আরেক অর্থ হলো মুক্তি,তখন অর্থ হবে মুক্তির রাত।কেননা এ রাতে আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর অগণিত বান্দাকে এ রাতে গোনাহ থেকে মুক্তি দেন,বিপদ হতে মুক্ত করেন।


এ রাতের গুরুত্বঃ


حم ﴿1﴾ وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ ﴿2﴾ إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ﴿3﴾ فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ ﴿4﴾

আল্লাহ এরশাদ করেন- হা-মীম, এ স্পষ্ট কিতাবের শপথ! নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেওয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ। (সূরা দুখান, আয়াত নং ১-৪)


এ আয়াতের তাফসীর সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য মুফাস্সিরগণের মতামতঃ

 (((১.মালেকী মাযহাবের আল্লামা শেখ আহমদ ছাভী বলেন- ঐ৯(  বরকতময় রজনী হচ্ছে অর্ধ শাবানের রাত্রি (মোফাসসিরীনে কেরামের অন্যতম মোফাসসির) বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)ও অন্যান্য তাফসীরকারকদের একদলের অভিমত। তারা এর কয়েকটি কারণও উল্লেখ করেছেন। শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত্রির চারটি নামে নামকরণ করেছেন। যেমন- ১। লাইলাতুম মুবারাকাহ- বরকতময় রজনী। ২। লাইলাতুল বারাআত- মুক্তি বা নাজাতের রাত্রি। ৩। লাইলাতুর রহমাহ- রহমতের রাত্রি। ৪। লাইলাতুছ ছাক- সনদপ্রাপ্তির রাত্রি ইত্যাদি। (তাফসীরে ছাভী, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪০)

২.তাফসীরে জালালাইন শরীফে রয়েছে-নিশ্চয়ই আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। আর বরকতময় রাত হল লাইলাতুল ক্বদর (ক্বদরের রাত) অথবা লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান (শাবানের মধ্য রাত তথা শবে বরাত)। কেননা এই রাতে উম্মুল কিতাব (কোরআন শরীফ) ৭ম আসমান থেকে দুনিয়ার আসমানে (১ম আসমান) নাযিল হয়েছে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। (তাফসীরে জালালাইন শরীফে ৪১০ পৃষ্ঠায়)

৩.তাফসীরে তাবারী শরীফে রয়েছে- আল্লাহ তায়ালার বাণী এর তাফসীরে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ইকরামা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে বছরের সকল ব্যাপার চ‚ড়ান্ত করা হয়, জীবিত ও মৃতদের তালিকা লেখা হয় এবং হাজীদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে একজনও কমবেশি হয় না। (তাফসীরে তাবারী শরীফ, পৃষ্ঠা ২২, খন্ড ১০)

৪. প্রসিদ্ধ তাফসীরে কুরতুবী রয়েছে- ইমাম কুরতুবী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)বলেন, এ রাতের ৪ টি নাম আছে- (ক). লাইলাতুম মুবারাকা, (খ). লাইলাতুল বারাআত, (গ). লাইলাতুছ্ ছাক (ঘ). লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। (তাফসীরে কুরতুবী, খন্ড-১৬ পৃষ্ঠা-১২৬)

৫.তাফসীরে বাগভী শরীফে বর্ণিত আছে- নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শবে বরাতের রাতে সকল বিষয়ের চ‚ড়ান্ত ফয়সালা করেন এবং শবে ক্বদরের রাতে তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করেন । (তাফসীরে বাগভী, খন্ড-৭, পৃষ্ঠা ২২৮)

এ রকম ৬৫ টি তাফসীর গ্রন্থে লাইলাতুম মোবারাকা বলতে শবে ক্বদরের পাশাপাশি মধ্য শাবান অর্থাৎ ১৪ শাবানের রাতের কথাও গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে।


হাদীসের আলোকে লাইলাতুল বরাতের দলীল

দলীল নং : ১

হযরত আবূ মূসা আশয়ারী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ ফরমান- মধ্য শাবানের রাত্রিতে আল্লাহ পাক রহমতের তাজাল্লী ফরমান এবং তার সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতাপোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না সূত্র 


 দলীল নং : ২

হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মধ্য শাবানের রাত্রিতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে জালওয়া রাখেন, অত:পর তাঁর সকল বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক বা শত্রুতা পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না।তথ্য সূত্র


দলীল নং : ৩

উম্মুল মোমেনীন মাহবুবায়ে মাহবুবে রাব্বিল আলামিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- রহমতে আলম নূরে মুজাচ্ছম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন হুজুর পাক রাউফুর রাহীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হযরত আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে জিজ্ঞেস করলেন- হে আয়েশা! শাবান মাসের মধ্য রাতের মর্যাদা ও বুযুর্গী সম্পর্কে তুমি কি জান? তিনি আরজ করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাবান মাসের মধ্যবর্তী রাতের কি মর্যাদা রয়েছে? আল্লাহ হাবিব (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেন- আগামী এক বছরে কতজন আদম সন্তান ভূমিষ্ট হবে এবং কতজন আদম সন্তান মৃত্যুবরণ করবে তা এ রাত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়। আর এ রাত্রিতে তাদের আমল মহান আল্লাহ দরবারে উপস্থাপন করা হয় এবং তাদের রিযিক অবতীর্ণ কিংবা নির্ধারণ করা হয়। অত:পর হযরত আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “আল্লাহ রহমত ছাড়া কারো পক্ষে কি জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মহান আল্লাহ বিশেষ রহমত ও একান্ত অনুগ্রহ ছাড়া কারো পক্ষে জান্নাতে যাওয়া সম্ভব নয়। এ কথাটি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন।  


এ রাতের ফযিলতঃ


হাদীস শরীফে এসেছে-

عن عائشة رضى الله عنها قالت : فقدت رسول الله صلى الله عليه وسلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله؟ قلت يا رسول الله ظننت أنك أتيت بعض نسائك.

فقال إن الله تبارك وتعالى ينزل ليلة النصف من شعبان إلى سماء الدنيا فيغفر لأكثر من عدد شعر غنم كلب.

 

  • উম্মুল মু’মিনীন আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন : আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় পেলাম না তাই আমি তাকে খুঁজতে বের হলাম, ‘বাকী’ নামক কবরস্থানে তাকে পেলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তুমি কি আশংকা করেছো যে আল্লাহ ও তার রাসূল তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করবেন?

আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি মনে করেছি আপনি আপনার অন্য কোন স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মধ্য শাবানের রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন, অতঃপর কালব গোত্রের পালিত বকরীর পশমের পরিমানের চেয়েও অধিক পরিমান লোকদের ক্ষমা করেন। তিরমিজি


عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان، فيغف لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن.

  • হযরত মুআয ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘অর্ধ শাবানের রাতে আল্লাহ সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। অতপর শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া তার সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।’

  • হযরত আলা ইবনুল হারিছ রাহ. থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়তো মৃত্যু বরণ করেছেন। আমি  তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা, অথবা বলেছেন, ও হুমায়রা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন-

هذه ليلة النصف من شعبان، إن الله عز وجل يطلع على عباده في ليلة النصف من شعبان، فيغفر للمستغفرين ويرحم المسترحمين ويؤخر أهل الحقد كما هم.

‘এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত। (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত।) আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রার্থীদের প্রতি অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’ -শুআবুল ঈমান, বায়হাকী ৩/৩৮২-৩৮৩

শবে বরাতে করণীয়

বেশি বেশি করে নফল নামাজ পড়া। 

  • শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত ও কোন কোন সূরা পড়তে হয়?

  • শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোনো নামাজ কোরআনে বা হাদিসে উল্লেখ নেই। তবে হাদিসে আছে, রাসূল (সা.)বলেন, যখন শাবান মাসের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল নামাজ পড়বে এবং দিনে রোজা পালন করবে। ইবাদতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো নামাজ। সুতরাং নফল ইবাদতের মধ্যেও শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ। এটি ইবনে মাজাহ শরিফের ১৩৮৪ নম্বর হাদিস।

আর তাই দুই রাকাত করে যত খুশি তত বার নামাজ পড়তে পারেন। আর তার নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। এখন নিয়ত করবেন কিভাবে? বলবেন, আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পরছি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার। এভাবে সংকল্প করলেই আপনার নামাজ হয়ে যাবে। তবে এখানে সূরা ফাতিহা একবার আর সূরা ইখলাস তিনবার পড়তে হবে বা সূরা ওয়াকিয়া পড়তে হবে এমন কোনো কথা হাদিসে নেই। এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাই সূরা ফাতিহার পরে যে কোনো সূরা দিয়ে নামাজ পড়লেই নামাজ হয়ে যাবে (ইনশাল্লাহ!)।



  • রোজা রাখা

শবে বরাতের রোজা কয়টি ও কীভাবে রাখতে হয়? এবং রোজা রাখা যাবে কি না?


হজরত মোহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ১৫ শাবান রাতে তোমরা জেগে থেকে ইবাদত করো এবং পরদিন রোজা রাখো। এ হাদিস দিয়ে শবে বরাতের একটি নফল রোজা প্রমাণিত হয়। তবে বিভিন্ন হাদিসে হজরত মোহাম্মদ (সা.) প্রত্যেক আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ তিনদিন তিনটি নফল রোজা (আইয়াম বীজ) রাখতে উৎসাহিত করেছেন। সে হিসেবে শাবান মাসেও এ তিনটি রোজা রাখা যেতে পারে। আবার অন্য আর একটি হাদিসে রয়েছে,  হজরত উম্মে সালমা ও হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, শাবান মাসে হজরত মোহাম্মাদ (সা.) অধিকহারে রোজা রাখতেন। যেন তিনি গোটা শাবান মাসই রোজা রাখতেন। সে হিসেবে শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখা অবশ্যই সওয়াবের কাজ। (তিরমিযি ১/১৫৫, ১৫৬, ১৫৯)।


  • দোয়া ও তাওবা-ইস্তেগফার

এ রাতেে একাগ্রতার সাথে দোয়া ও  তাওবা করতে হবে। কেননা  আল্লাহ তায়ালা এ রাতে বান্দার দোয়া ও  তাওবা কবুল করে ক্ষমা করে দেন।যা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر

অর্থ: ‘হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত. মহা নবী (সা.) ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে।

কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, ‘কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।’ ‘কোনো রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।’ ‘কোনো মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।’ এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)


যাদের তাওবা কবুল হবেনা।

(১) মুশরিক (২) মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান (৩) আত্মীয়দের সাথে ন্যায়সঙ্গত কারণ ছাড়া সম্পর্ক ছিন্নকারী (৪) জালিম শাসক ও তাহাদের সহযোগী, (৫) না হক হত্যাকারী (৬) পরনারীগামী (৭) মদ্যপানকারী (৮) ইর্ষাপরায়ণ (৯) নিন্দাকারী (১০) গনক ও রেখা টানিয়া অথবা ফালনামা দেখিয়া ভাগ্য ও ভবিষাৎ শুভাশুভ নির্ধারণকারী (১১) গায়ক ও বাদক (১২) মিথ্যা শপথের সাহায্যে পণ্য বিক্রয়কারী (১৩) পায়ের গিরার নিচে গর্ব সহকারে কাপড় পরিধানকারী (১৪) যাদুকর (১৫) পরস্পর শত্রুতা ভাব পোষণকারী (১৬) কৃপণ (১৭) অন্যায়ভাবে শুল্ক আদায়কারী (১৮) জুয়াড়ি (১৯) দাবা-পাশার খেলোয়াড় (২০) বিদআ’ত প্রচলনকারী (২১) মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী (২২) সুদ দাতা (২৩) সুদ গ্রহিতা (২৪) ঘুষ দাতা ও গ্রহিতা (২৫) সন্ত্রাস ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী।

তাই শবে বরাতের পূর্ণ ফযিলত ও শবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য উল্লেখিত কবীরা গুনাহসমূহ থেকে খাঁটি দিলে তওবা করা উচিত। অন্যথায় সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করেও কোনো লাভের আশা করা যায় না।



শবে বরাতে বর্জণীয়ঃ


‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’ আসলেই সুন্নাহর বাইরে অনেক কাজ সম্মিলিতভাবে আয়োজন করা হয়। যার কোনোভাবেই বৈধ নয়। তাই সেসব বিষয় থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি। তাহলো-

  •  ‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’ উপলক্ষে পরিবারের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজনের মধ্যমে সারা বছর ভালো খাবার পাওয়ার বিশ্বাস ও আয়োজন থেকে বিরত থাকা।

  •  ‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’-এ আনন্দ বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে মারাত্মক শব্দ দুষণের হাতিয়ার ফটকা ও আতশবাজী ইত্যাদি থেকে বিরত থাকা।

  •  ‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’-এ গোনাহ মাফের নিয়তে সন্ধ্যা রাতে গোসল করা থেকে বিরত থাকা। ঘরে, আঙিনায়, কবরে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো ও গোলাপজল ছিটানো থেকে বিরত থাকা।

  •  ‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’-এ বাড়ি ঘর আলোকসজ্জা, কবরস্থানে আলোকসজ্জা ইত্যাদিও পরিহার করা আবশ্যক। কারণ শবে বরাতের নামে ইসলামে এ সব মারাত্মক সীমালঙ্ঘন। তা কোনোভাবে বৈধ নয়।

আল্লাহ তা’য়ালা মুসলিম উম্মাহকে ‘লাইলাতান নিসফে মিন শাবান’ তথা শাবান মাসের মধ্য রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। সুন্নাহ বহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। এ রাত সম্পর্কে বিতর্ক, বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি পরিহার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক:মাওলানা ইকবাল হুসাইন ইলামপাড়ী 

শিক্ষক: কাঞ্চনপুর দারুল উলূম কাওমি মাদ্রাসা,বড়লেখা,মেীলভী বাজার।


E-mail: iqbalmisbahbd@gmail.com


Post a Comment

0 Comments